ভয়ের গল্প লেখার কিছু সহজ পদ্ধতি

ভয়ের গল্প লেখার কিছু সহজ পদ্ধতি

একটি উপন্যাসের নিপুন উপস্থাপনা নির্ভর করে একজন ঔপন্যাসিকের বিশেষ দক্ষতার উপর।আর সেই দক্ষতা গড়ে ওঠে গবেষণার দ্বারা,অর্থাৎ একজন ঔপন্যাসিক যত পড়বেন তত ভালো লিখবেন।হরর সিরিজ বা ভয়ের গল্প পর্যায়ক্রমিক উপস্থাপনাও এর ব্যতিক্রম নয়।আর ভালো হরর সিরিজ পড়তে গেলে যে প্ল্যাটফর্মটির কথা না বললেই নয়;সেটি হল পকেটে নভেল রিডার (pocket Novel Reader),যেখানে বিভিন্ন ঘরানার  উপন্যাসের সাথে সাথে প্রচুর ভয়ের গল্প পর্যায়ক্রমিক উপস্থাপনা পরিবেশিত হয়েছে।’পদ্মদহের প্রেত’’,’’অশরীরী’’,প্রভৃতি ভয়ের উপন্যাসের মধ্যে অন্যতম।এবার দেখা যাক কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করলে একটি উপন্যাস প্রকৃতপক্ষে হয়ে ওঠে একটি হরর নভেল যা খুব স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে পাঠকের মনে একটি ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম।

ভয়ের গল্প  লেখার ক্ষেত্রে কল্পনার গুরুত্ব –

যখনই ফিকশনাল লিটারেচার বা কল্পগল্প উপস্থাপিত হয় খুব স্বাভাবিকভাবে সেখানে  কল্পনার উপস্থিতি প্রাধান্য পায়।তাই প্রকৃতিগতভাবে হরর সিরিজ যেহেতু সামগ্রিকভাবেই কল্পনা নির্ভর,সেহেতু ফিকশন অর্থাৎ কল্পগল্পঃ হিসেবে ভয়ের উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতা সর্বাধিক।তাই হরর সিরিজ লেখার ক্ষেত্রে ঔপন্যাসিক কে স্বাভাবিকভাবেই বিপুল কল্পনাশক্তির অধিকারী হতে হবে,যা তার লেখনীতে সঠিকভাবে একটি আতঙ্কের পরিবেশ  করতে সৃষ্টি সক্ষম হবে।

ভয়ের গল্প  লেখার ক্ষেত্রে গল্পে আতঙ্কের উপস্থিতি –

একটি হরর সিরিজ তখনই সার্থক যখন সেটা পাঠকের মনে আতঙ্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।বাস্তবে কোন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয়েও হরর সিরিজের পাঠক ভয়ের অনুভূতিকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে পারেন শুধুমাত্র ভয়ের গল্প বা হরর নভেল পাঠের মাধ্যমে।তাই উপন্যাসের শব্দবন্ধ যাতে নির্দিষ্টভাবে ভয়ের পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং আতঙ্কের সঠিক প্রতিফলক হয়ে ওঠে সেদিকে লেখক-এর বিশেষ দৃষ্টি কাম্য।

সঠিক প্লটের বর্ণণা –

একটি ভালো হরর নভেল একটি বিনোদন পার্কে ভ্রমণ করার মতোই মনোরঞ্জন প্রদান করতে পারে। পাঠক উপন্যাসের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মাধ্যমে আতঙ্কের নাগরদোলায় আরোহন করে হৃদপিন্ডের গতি বাড়াতে পারেন।তাই একজন দক্ষ চিত্রকরের মতোই ঔপন্যাসিক কে তার হরর সিরিজ নভেলের ক্যানভাসে শব্দের রং তুলি দিয়ে ত্রাসের চিত্র অঙ্কন করতে হবে।

ভয়ের গল্প  লেখার ক্ষেত্রে অপ্রতাশিত্য প্লটের ব্যবহার –

পাশ্চাত্যের ভৌতিক কথাসাহিত্যে H.P. Lovecraft-এর নাম সর্বজনবিদিত। তিনি বলেছিলেন মানুষের সবথেকে পুরনো ও শক্তিশালী আবেগ হলো ভয়,আর এই ভীতি হলো মূলত অজানার প্রতি।বাস্তবিকভাবেই ভৌতিক কথাসাহিত্য যদি জানা থেকে অজানা দিকে অগ্রসর হয় তা যে পাঠকের মনে ভীতি সৃষ্টি করবে,এটা অবশ্যম্ভাবী।

ভয়ের গল্প মৃত্যুর উপস্থিতি-  

মানব সভ্যতার সবথেকে বড় বিভীষিকা হল মৃত্যু,আর এই মৃত্যু যদি স্বাভাবিক নিয়মে না হয়ে; অস্বাভাবিক কোন আধিভৌতিক কারণে হয় তাহলে তা যথাযথভাবে হরর নভেলের প্লট কে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর ও জমজমাট করে তোলে। তাই খুব স্বাভাবিক কারণেই একজন লেখক তার নভেলে উপরোল্লিখিত উপাদানকে তার হরর নভেল সিরিজে ব্যবহার  করতে পারেন, ফলস্বরূপ তিনি পাঠকদের একটি ভয়ংকর পরিস্থিতি উপহার দিয়ে তাদের নভেল পড়ার আগ্রহ কে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হবেন।

একটি হরর নভেলের উপাদান হিসেবে একজন লেখক নিম্নোক্ত বিষয়গুলি ব্যবহার করতে পারেন: 

যেমন-অব্যবহৃত পুরনো বাড়ি,অপ্রাকৃতিক শক্তি,অলৌকিক আধিভৌতিক শব্দ তরঙ্গ,খুন প্রভৃতি। চিরাচরিত ও প্রচলিত রীতি নীতি ব্যাখ্যা উপন্যাসিক একটি আধিভৌতিক আঙ্গিকে সাজিয়ে তাঁর উপন্যাসে ব্যবহার করতে পারেন,কিন্তু এক্ষেত্রে তাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তা প্রচলিত ধারণার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়ে পড়ে।অনেক প্রচলিত গল্প বা ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা অনুপস্থিত।লেখক সেই ব্যাখ্যা কে কাল্পনিক তথা অপ্রাকৃত রূপ দিয়ে পাঠককুল কে একটি ভীতিকর প্রেক্ষাপট উপহার দিতে পারেন তাঁর উপন্যাসের মাধ্যমে।

বাংলা ক্লাসিক ভৌতিক গল্পসমগ্র এর মধ্যে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট অমর ‘’বরোদা’’ চরিত্র  একালের ও সেকালের পাঠক মহলে বেশ প্রশংসা পেয়েছে।

বিভূতিভূষণের পুত্র তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘’তারানাথ তান্ত্রিক’’-এর চরিত্রটি সর্বজনবিদিত।এছাড়া বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘’ভয় সমগ্র’’, ‘’অলৌকিক গল্প ভৌতিক গল্প’’,হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘’ভৌতিক সমগ্র’’ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

সর্বোপরি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রচ্ছদ;যেখানে পাঠক সবার আগে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং উপন্যাস পছন্দ করেন।তাই প্রচ্ছদটি কাহিনীর অনুরূপ চিত্রায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রচ্ছদ প্রকৃতপক্ষেই যাতে লেখক-এর শব্দবন্ধের অনুগামী হয়ে আতঙ্কের বাতাবরণের প্রাথমিক পর্বের সূচনা করে সেই দিকে লক্ষ্য রাখা  অত্যাবশ্যক।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *